তিন দিনে তিন বার ভারতীয় এলাকা দখলের চেষ্টায় চীন

প্রকাশিত : ৯ সেপ্টেম্বর ২০২০
ছবি : সংগৃহীত

চীন লাগোয়া ভারতের পূর্ব লাদাখ সীমান্তে উত্তেজনার পারদ চড়ছে। গত কয়েক দিনে ওই এলাকায় চীনা সেনার তৎপরতা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী সূত্রের খবর, গত তিন দিনে তিন বার প্যাংগং লেকের কাছে কৌশলগত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভারতীয় সেনাচৌকি দখলের চেষ্টা করে চীনা সেনারা। দেশটির গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন তথ্য জানিয়ে বলা হচ্ছে, সেই চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছে ভারতীয় জওয়ানরা। তবে বসে নেই চীনা সেনারাও। পূর্ব লাদাখ সীমান্তে সেনা উপস্থিতি বাড়ানোর পাশাপাশি, সমরসজ্জাও বাড়াচ্ছে তারা। ওই এলাকায় যে কোনও ধরনের পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে তৈরি রয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনীও।

গালওয়ানে গত জুনে ভারতীয় ও চিনা সেনার মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর সামরিক এবং রাজনৈতিক স্তরে উভয় দেশ আলোচনার টেবিলে বসলেও উত্তেজনা প্রশমন হয়নি। এই পরিস্থিতিতে সীমান্তে চীনা সেনাবাহিনীর তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দক্ষিণ প্যাংগং লেকের কাছে গুরুং হিল এবং রজাং লা হিলের মাঝামাঝি এলাকায় ভারতীয় সেনার চৌকি রয়েছে। চিন ওই চৌকিটি দখলের চেষ্টা করেছিল। ওই সেনা কর্মকর্তার কথায়, ‘চৌকিটি দখলের প্রথম চেষ্টা হয়েছিল গত শুক্রবার। রোববার ও সোমবার বিকেলে চীনা সেনারা ফের ওই চৌকি দখলের চেষ্টা করে।

তিনি জানান, চীনা সেনারা ওই এলাকায় থাকা ভারতীয় সেনাদের বার্তা দিতে ওয়ার্নিং শট’ (শূন্যে গুলি ছোড়া) করেছিল। সম্ভবত ওই চৌকিটি দখলের জন্যই সেনাদের একজোট করেছিল পিএলএ। ভারতীয় ওই সেনা কর্মকর্তা আরও বলেন, চৌকিটি যদি চীন দখল করে নিত, তাহলে চীনের দিকে থাকা প্যাংগং লেকের অংশটির পুরো নিয়ন্ত্রণই বেজিংয়ের হাতে যেত। কিন্তু এই দখলের চেষ্টা ভারতীয় বাহিনী ব্যর্থ করেছে। পূর্ব লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর দুই দেশের সেনা কার্যত চোখে চোখ রেখে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এক সেনা কর্মকর্তা কলকাতার দৈনিক আনন্দবাজারকে বলেন, উভয় সেনাবাহিনীর মনোভাব অত্যন্ত আগ্রাসী। যেসব সেনা চৌকি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ, সেগুলো আমরা কোনোভাবেই দখল করতে দেব না।

ওই সেনা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গত তিন সপ্তাহে চশুলের উচু এলাকায় ভারতীয় সেনাবাহিনী বেশ কয়েকটি চৌকি তৈরি করেছে। ওই সুউচ্চ জায়গাগুলোতে আমাদের নিয়ন্ত্রণ কায়েম হওয়ায়, সেখান থেকে চীনের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটির ওপর নজর রাখতে সুবিধা হবে। পূর্ব লাদাখ সীমান্ত থেকে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দূরে চীনের হোটান বিমান ঘাঁটি। ওই সেনা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, হোটান বিমানঘাঁটিতে চীন জে-২০ যুদ্ধবিমানসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ সরঞ্জাম মোতায়েন করছে। তিনি বলেন, ‘সুখোই-৩০ এমকেআই, জাগুয়ার ও মিরাজ ২০০০ এর মতো যুদ্ধবিমানগুলোকে পূর্ব লাদাখ সীমান্তে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’

এক উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পাঁচ দিন ধরে চশুলে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন হয়েছে। উত্তর ভারতে থাকা সেনার বিভিন্ন বাহিনীকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। চীনা তৎপরতা মোকাবিলা করতেই এই প্রস্তুতি। শ্রীনগর এবং অবন্তিপোরায় বিমান ঘাঁটিতেও গতকাল রাত থেকে তৎপরতা শুরু হয়েছে। সেখান থেকে বিভিন্ন সরঞ্জাম সীমান্তে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। শ্রীনগর-লে জাতীয় সড়ক দিয়েও সমরসরঞ্জাম পৌঁছচ্ছে সীমান্তে।

 

আপনার মতামত লিখুন :